কবি ফরিদা আখ্তার মায়া’র একগুচ্ছ কবিতা
কবি ফরিদা আখ্তার মায়া’র একগুচ্ছ কবিতা
এক।
প্রভাতের সমীরণে
আমার মায়ের হাত ধরে আমার প্রথম হাঁটতে শেখা
গুটিগুটি পায়ে আঙিনায় পা ফেলা
মা বলতেন হোঁচট খেয়ে পড়ে উঠে দাঁড়াতে পারলে আর ঠেকায় কে
আমি হাঁটতে শুরু করি
হাঁটতে গিয়ে পথের দেখা পেলাম,পথে আরো দেখা হলো সবুজ ঘাসের সনে
ঘাসের গন্ধ শুঁকতে গিয়ে শিশির কণার লুকোচুরির সাথে দেখা হয়ে গেলো
আর লুকোচুরি দেখতে গিয়ে রোদের সাথে প্রেম
আমি রোদে জড়াজড়ি, আহ! কি যে ভালো লাগা
গোধুলি এসে আমায় ধাক্কা দিলো
আমি আবার হোঁচট খেলাম,ঘুরে দাঁড়াতে গিয়ে
ঢেউয়ের সাথে ধাক্কা,আঁচড়ে পড়া বালুকা বেলায়
আমি বলাকার পিছনে ছুটতে লাগলাম,
চোরাবালিতে পাঁয়ের পাতা আস্তে আস্তে ঢুকতে লাগলো
কিন্তুু আমায় হাঁটতে হবে
মা বলেছেন,উঠে দাঁড়াতে
আমি নীল জলের সনে অভিসারে মত্ত হলাম
হাত বাড়ালাম দিগন্তের ওপারে
মরিচিকার সনে সাজালাম বাসর
প্রভাতের সমীরণে আবার চলতে শুরু করলাম
পড়ে রয়েছে বন্ধুর পথ
আমি দূরন্ত বলাকা হবো
শৈশব কৈশোর ফেরিয়ে আমি যৌবনের মাদকতায়
জিয়নের নেশায় মাতাল হবো
পাড়ি দেবো সমুদ্র গঙ্গা
মুক্তো কণায় কণায় লিখবো অলিখিত কাব্য।
আর ঝিনুকে আঁকবো প্রেয়সীর হারানো চোখ।
দুই।
নগ্ন নিষ্ঠুরতা
ক্ষয়ীষ্ণু পৃথিবীর জরাগ্রস্থ মানবতা বদ্ধকুঠুরীতে আবদ্ধ হয়ে
ইয়া নফসী ইয়া নফসী বলে বলে জিহবা শুকিয়ে ফেলায় ব্যস্ত মধুমাস জ্যৈষ্ঠের নিস্তব্ধ দুপুর।
দুটি ডাহুক পাখির
বিদীর্ণ চিৎকারে কর্ণকুহর ভেদ করে হৃদপিন্ডের কুঠুরীতে আঘাত আঘাতে জর্জরিত হয়ে সিক্ত আঁখিজলে সন্তান বাৎসল্যের মধুকর চিত্রে
আহা! একি করুণ দৃশ্য
সন্তান হারানোর বেদনায় দিশেহারা ডাহুক ডাহুকী
এদিক সেদিক উড়া উড়ি, ক্লান্তিহীন ছুটে চলা
মুখ ভর্তি আহার,শূণ্য বাসায় হাহাকার
কান দুটো খাড়া করে শব্দ শোনার অপেক্ষায়
শুকিয়ে যাওয়া কাদায় লুটোপুটি
ঐ বুঝি ডাক শোনা যায়
ছুটে আসে,চোখ দুটি খুঁজতে থাকে সন্তানদের
এইতো বাচ্চার কিচির মিচির
মা পাখিটা উতলা
ছানা দুটো দুষ্টু শিশুদের খেলার সামগ্রী
মাথার উপর দিয়ে ডাহুকটা উড়ছে
করুন চাহনী
মা পাখিটা আরো কাছে
ততক্ষণে ছানা দুটিতে শিকারীর লোলুপ দৃষ্টি
চক চক শিকারীর ঝাঁপির নিচে ছানা দুটির করুণ চিৎকার
ডাহুক ডাহুকী ঝাঁপির চারদিকে
সন্তান ছিনিয়ে নেয়ার আপ্রাণ চেষ্টায়
সারা রাত সন্তান হারানোর আর্তনাদ
রাতের নিরবতা ভেদ করে চলেছে
সোবহে সাদেক শেষে সোবহে কাজেব
আলো আধারির খেলা
ছানা দুটি আপনমনে ডাকছে
মা পাখিটা ছুটে এল
সাথে বাবা ও
ঝাঁপিটা পড়ে গেল
ফাঁদে আটকে গেছে ওরা
ডাহুক ডাহুকী শিকারীর খাঁচায় বাজারে
ছানা দুটো অবিরাম ডাকছে।
তিন।
গীবত করা ভালো নয়
তোমরা কি কেউ মৃত ভাইয়ের
কাঁচা মাংস খাও
তবে কেনো তোমরা অন্যের
গীবত করতে যাও?
গীবত কিংবা পরনিন্দা, পরচর্চা
খুবই ঘৃণার কাজ
গীবত করে লোক সমাজে
দিওনা কাউকে লাজ।
অপবাদে ঢেকে কাউকে
করোনা ফালা ফালা
তোমার দেয়া বিষের ছুরি
বাড়াবে তার জ্বালা।
নিজের চোখে দেখে থাকলে
তাও ঢেকে রাখো
কেয়ামতের মাঠে ফলের
অপেক্ষাতে থাকো।
কি হবে ভাই এসব করে
ঘুম ভাঙিলে প্রভাত
আঁখি দুটি থাকলে বুজে
আঁধার কালো রাত।
পাপিকে নয় তোমরা সবে
পাপকে ঘৃণা করো
শোধরে দেবার তরে তারে
হাত বাড়িয়ে ধরো।
ভালো কাজে দাওগো আদেশ
মন্দ কাজে বাধা
জীবনটা নয় অতি সহজ
আছে গোলক ধাঁ ধাঁ।
চোখের হিসাব চোখে দিবে
হাতের হিসাব হাতে
ঝগড়া বিবাদ ভুলে চলো
হাঁটবো এক সাথে।
চার।
চাষী
বাজান আমার মাঠে গেছে
লাঙল কাঁধে নিয়ে
সেথায় বাজান করে চাষ
হালের গরু দিয়ে।
সূর্য্যিমামা জাগার আগে
বাজান মাঠে যায়
হাতে থাকে কাস্তে কোদাল
গামছা থাকে গায়।
পোড়ামরিচ পেঁয়াজ দিয়ে
খাবার দেয় মায়
জমির আলে বসে বাজান
পান্তা গিলে খায়।
ঝড়বৃষ্টি মাথায় নিয়ে
বাজান করে কাজ
বাড়ির পথে হাঁটেন বাবা
হয় যখন সাঁঝ।
আঁধার কালো হয় যখন
বাজান ফিরে আসে
পূবের মাঠে সোনা ফসল
খলখলিয়ে হাসে।
মাঠের পানে তাকিয়ে সবে
বলে ফসল খাসা
উদাস মনে হেসে বলেন
আমি তো ভাই চাষা।
চাষী আমার নাম যে ভাই
করি যে মাঠে চাষ
সবার মুখে অন্ন যোগাই
আমিই বারোমাস।
সোঁদা মাটির গন্ধ গায়ে
পোড়া গায়ের চাম
চাষী মজুর বলে সবাই
দেয় না কোন দাম।
পাঁচ।
মা
মাগো তোমার পায়ের ধূ্লা
আমায় নিতে দিও
তোমার কাছে এলে মাগো
বুকে টেনে নিও।
তোমার কথা পড়ে মনে
দিবস নিশি রাতে
খাবার খেতে ইচ্ছে করে
মাগো তোমার হাতে।
তোমার ছোঁয়া পেলে মাগো
হৃদয় আমার নাচে
সারা জীবন চাই যে আমি
থাকতে তোমার কাছে।
রোগে শোকে ভুগি যখন
মা মা বলে ডাকি
তোমার মুখটা দেখার আশে
চেয়ে চেয়ে থাকি।
যতদূরে থাকো মাগো
উঠতে বসতে তুমি
সকাল সন্ধ্যা চায় যে মনে
তোমার চরণ চুমি।
তোমার মতো আপন মাগো
নেই যে কেউ আর ভবে
তুমি পাশে থাকো মাগো
দূরে গেলে সবে।
ঘরে যখন আসি ফিরে
মুখের পানে চেয়ে
সুধাও তুমি আমায় মাগো
আসছি নাকি খেয়ে।
তোমার পায়ে আছে মাগো
স্বর্গে আমার স্থান
খোদা তা’ লার মাগো তুমি
শ্রেষ্ঠ অবদান
ছয়।
বাবা
বাবা মানে মাথার ছাতা
মুখে মিষ্টি হাসি
বাবা মানে ভালোবাসা
স্বপ্ন রাশি রাশি।
বাবা মানে শতো বায়না
ইচ্ছে মতো বলা
বাবা মানে হাতটি ধরে
যেথা খুশি চলা।
বাবা মানে ঘামে ভেজা
মধুর গন্ধ গায়ে
বাবা মানে সুখে দুখে
চলা পায়ে পায়ে।
বাবা মানে ঘানি টানা
কষ্টে দিনে রাতে
বাবা মানে ঘরে ফেরা
খাবার নিয়ে হাতে।
বাবা মানে কাছে টেনে
আদর মাখা মায়া
বাবা মানে তপ্ত রোদে
বট বৃক্ষের ছায়া।#
ফেনী